ডিজিটাল মার্কেটিং করে আয় Digital Marketing

ডিজিটাল মার্কেটিং বর্তমানের সবচেয়ে বহুল আলোচিত একটি বিষয়।  ইন্টারনেটের প্রসার বৃদ্ধির ফলে আমাদের জীবন ধারার মান ও ইন্টারনেট নির্ভর হতে শুরু করেছে৷ একটা সময় ছিল যখন মার্কেটিং এর জন্য মানুষ বিভিন্ন এলাকায়,  দোকানে ঘুরে বেড়াত   একদিকে সেটা যেমন সময়সাপেক্ষ ব্যাপার অন্য দিকে এটার থেকে আয়ের পরিমাণ ও অনেক কম।   

ডিজিটাল মার্কেটিং করে আয় Digital Marketing


আপনি জেনে হোক বা না জেনে হোক ডিজিটাল মার্কেটিং শব্দটা হয়ত কখনো শুনেছেন।  অনেকেই আছেন যারা ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করতে চাচ্ছে।  তবে মার্কেটিং দক্ষতা ভালো থাকলেও সেটাকে কিভাবে ডিজিটালে রুপ দেয়া যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন না ।  


প্রিয় পাঠক,  আমাদের আজকের পোষ্টের মূল আলোচনার বিষয় হলো, ডিজিটাল মার্কেটিং কি ও ডিজিটাল মার্কেটিং কত প্রকার।  কিভাবে আপনি একদম বিগিনার থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করতে পারেন।  বিস্তারিত সব কিছু থাকছে মাত্র একটি পোষ্টে। 

ডিজিটাল মার্কেটিং কি 

চলুন শুরুতে জেনে নেই মূলত ডিজিটাল মার্কেটিং জিনিস টা কি?    ডিজিটাল মার্কেটিং বুঝতে হলে সবার আগে  বুঝতে  হবে মার্কেটিং কি৷  মার্কেটিং হলো কোনো পণ্য বা যে কোনো কিছু যেটা আপনার কাছে রয়েছে সেটা সম্পর্কে অন্যসব মানুষদের ভালোভাবে অবগত করা।   আর এসব জিনিস গুলো অনলাইনের মাধ্যমে করাকেই শুধু ডিজিটাল মার্কেটিং বলেনা,   আপনি যদি মার্কেটিং এর যে কোনো কাজ ডিজিটাল ডিভাইস ব্যাবহার করে করেন তবে সেটাই ডিজিটাল মার্কেটিং এর আওতাধীন হয়ে যাবে।  


যেমন- আপনি নকিয়া ১২০০ মডেল এর ফোন দিয়েও ডিজিটাল মার্কেটিং করতে পারবেন। এস এম এস এর মাধ্যমে   কিন্তু আপনার মোবাইল টি যেহেতু একটি ডিজিটাল ডিভাইস তাই এটাকেই বলা হবে ডিজিটাল মার্কেটিং।   

ডিজিটাল মার্কেটিং কত প্রকার ও কি কি – (Types of digital marketing)


ডিজিটাল মার্কেটিং এর আসলে কোনো প্রকারভেদ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না।  ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক বিস্তৃত বিষয় গুলো নিয়ে গঠিত।   তবে আপনি চাইলে ডিজিটাল মার্কেটিং অনলাইনে ও অফলাইনে করতে পারেন।   অনেক মার্কেটার ডিজিটাল মার্কেটিং কে ২ টি ভাগে ভাগ করেছেন   যেমন- ১,  অনলাইনে ডিজিটাল মার্কেটিং ও ২, অফলাইনে ডিজিটাল মার্কেটিং  


তবে এখানে অনলাইনে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে পেইড মার্কেটিংফ্রি মার্কেটিং ও রয়েছে।   যেহেতু এর বিষয়বস্তু অনেক বেশী বিস্তৃত তাই আপিনাদের ডিজিটাল মার্কেটিং সব গুলো জনপ্রিয় মাধ্যম নিচে বিস্তারিত ভাবে লিখে দিলাম  - 



এই মূহুর্তে আপনি যখন এই লেখাটি পড়ছেন তখন পুরো পৃথিবীতে ৪৭২ কোটি লোক ইন্টারনেট ব্যাবহার করছে। 


Bangladesh Telecommunication Regulatory Commission (BTRC) এর তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটি ৬৩ লক্ষ। যদি একটু লক্ষ করা যায় তাহলে এটি বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৭০%।  তার মানে বাংলাদেশে প্রতি ১০ জনে ৭ জনের মোবাইলে ইন্টারনেট এক্সেস আছে। 


e-Commerce Association of Bangladesh(e-CAB) এর তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালে এসে অনলাইনে কেনাকাটা করার প্রবণতা প্রায় ৭০% বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে খাদ্য আর পণ্য কেনার প্রবণতা প্রায় ৩০০% বৃদ্ধি পেয়েছে ।


তাহলে আপনি যদি, এখন মনে করেন টিভিতে কয়েক সেকেন্ড এর একটি এড আর ঈদে একটি অনুষ্ঠান প্রচার করে আপনি কয়েক মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌছাতে পারবেন, তাহলে আপনি ভূলের স্বর্গে বাস করছেন কারণ বিশাল একটি জনগোষ্ঠী এখন অনলাইন এ চলে এসেছে এখন এই বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে পৌছাতে আপনাকে যেই জিনিসটা করতে হবে সেটাই হল Digital Marketing. 


ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রকারভেদ 

1.সার্চইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান(SEO)


আমরা কোনো কিছু খোজার জন্য google ব্যবহার করে থাকি এই গুগল ই হচ্ছে একটি সার্চ ইঞ্জিন তাছাড়াও, Yahoo,Bing এইগুলা হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন। 


এই সার্চ ইঞ্জিন এ যখন আমরা কোনো তথ্য সার্চ করি তখন দেখা যায় অনেক ওয়েবসাইটই এই তথ্য সরবরাহ করতে পারে।  অনেকগুলা ওয়েবসাইট ই দেখায় কিন্তু এর মাঝেও কিছু ওয়েবসাইট সবার উপরে থাক।  আর কিছু থাকে নিচে এইযে উপরের দিকে ওয়েবসাইটগুলো দেখাচ্ছে এগুলো যার মাধ্যমে করা হয়েছে তা হল SEO.একই তথ্য 

অনেক ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া গেলেও এই SEO এর মাধ্যমে কোনো একটি নিদিষ্ট ওয়েবসাইট সবার উপরে দেখানো হয়।  


SEO তে মূলত কিছু কিওয়ার্ড দেওয়া হয় সার্চ ইঞ্জিনদের যার ফলে। এই কিওয়ার্ড দিয়ে যদি কেউ কোনো তথ্য চেয়ে গুগল এ সার্চ করে তাহলে যেন তাদেরটা সবার উপরে দেখায়।  এছাড়াও টেকনিকাল এসএইও তে অনেক ফ্যাক্টর এখানে আছে।  

2.প্রতি-ক্লিক-পে (PPC).


PPC মানে হচ্ছে "পে পার ক্লিক"। ধরুন আপনি চাচ্ছেন আপনার কোনো ওয়েবসাইট এর বিজ্ঞাপন google এর মাধ্যমে দিবেন সেক্ষত্রে গুগলকে আপনি যখন এটি জানাবেন তারাও সেটিতে রাজি হবে কিন্তু বিনিময়ে google কে কিছু ফি প্রদান করতে হবে। 


ফ্রি প্রদান এর ধরণটাও কিছুটা আলাদা আপনি গুগলকে নিদিষ্ট কিছু কিওয়ার্ড দিবেন যাতে এই কিওয়ার্ডগুলো দিয়ে যদি কেউ সার্চ করে তাহলে সার্চ রেজাল্ট এর সবার উপরে, যেন তাদের রেজাল্টটি থাকে এবং গুগলও সেটি করে। এটার জন্য গুগল কোনো চার্জ নেয় না তবে কেউ যদি আপনার ওয়েবসাইট এ ভিজিট (ক্লিক) করে তাহলে প্রতি ক্লিক এর জন্য গুগলকে আপনার একটি চার্জ দিতে হবে এটিই হল PPC।  PPC এর এড চেনার একটা ছোট উপায় হল, সার্চ রেজাল্ট এর নিচে ছোট করে "Ad" লেখাটি থাকে 

3.সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (SMM).

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করা হয় মূলত বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলোতে। যেমন- ফেসবুক,ইনস্টাগ্রাম,ইউটিউব ইত্যাদি। 


ফেইজবুক এর কথাই ধরা যাক, ফেইজবুক এ প্রায়ই কিছু পেইজ দেখা যায় যা, আমাদের হোমপেইজ এ সো করে  কিছু ওই পেইজ এ আমাদের কোনো লাইক কিংবা ফলো দেওয়া নেই এই ঘটনাটি ঘটে SMM এর মাধ্যমে। 


তারমানে অই নির্দিষ্ট পেইজ ফেইসবুককে চার্জ প্রদান করে যেন তাদের এডভারটাইজিং করে তাদের পেইজটি সবার কাছে সো করে। উদাহরণ হিসেবে Daraz কেই নেওয়া যাক Daraz এর বিভিন্ন পণ্য প্রায়ই দেখা যায় ফেইজবুক এ আপনার প্রোফাইল এ দেখায়  সাথে পেইজটিতে লাইক দেওয়ার জন্য লাইক বাটনটিও সাথে থাকে।


 এখন ধরুন আপনার কোনো পণ্য ভাল লাগল এই এড এর এখন যখনই আপনি বা আমরা প্রোফাইল এর দারাজের বিজ্ঞাপন এ ক্লিক করবেন সাথে সাথে ফেইজবুক আপনাকে দারাজ এর পেইজ এ নিয়ে যাবে এটিকেই মূলত বলা হয় SMM.

4.কনটেন্ট মার্কেটিং 


কনটেন্ট মার্কেটিং হল আপনার পণ্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত কোনো ব্লগ অথবা ভিডিও বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার এর মাধ্যমে ক্রেতাকে আকর্ষণ করার একটি পথ। 


কনটেন্ট মার্কেটিং এর প্রধান টুলগুলো হলঃ


  •  Blogs

  •  eBooks

  •  Online Courses

  •  Infographics

  •  Podcasts

  •  Webinars


এই পন্থাগুলো অবলম্বন করে ধারাবাহিক ভাবে কনটেন্ট মার্কেটিং এর সাথে যুক্ত থাকলে অতি অল্প সময়ে কয়েকগুন ক্রেতার কাছে পৌছানো সম্ভব। 

5.ইমেইল মার্কেটিং

আধুনিক এই যুগে আরেকটি জনপ্রিয় মাধ্যম হল ইমেইল। প্রায় সকলেই ব্যাক্তিগত ভাবে ইমেইল ব্যবহার করে থাকে।   


ইমেইল মার্কেটিং হল, ইমেইল এর মাধ্যমে কাস্টমার এর নিকট আপনার পণ্য পৌছানো।  এর জন্য প্রথমে আপনার কিছু সংখ্যক মেইল একাউন্ট এর প্রয়োজন হবে। সেটি যোগাড় করার জন্য মেইল ক্যাম্পেইন এর আয়োজন করতে পারেন এর মাধ্যমে আপনি অসংখ্য মেইল সংগ্রহ করতে পারেন। এবং পরবর্তীতে এইগুলোকে আপনার পণ্য এর বিজ্ঞাপন পাঠানোর জন্য ব্যবহার করতে পারেন।  এতে করে আপনার পণ্য অথবা যেকোনো কিছু বিজ্ঞাপন ক্রেতার নিকট সহজেই পৌছে যাবে।  

শেষ কথা

বর্তমান যুগ আধুনিক যুগ।  কিন্তু  ভবিষ্যত যুগ আরো অত্যাধুনিক যুগ। একটা  সময় আসবে যখন ক্লাসিক মার্কেটিং এর যুগই আর থাকবে না মানুষ সম্পূর্ণ ইন্টারনেট ভিত্তিক জীবন যাপন করবে তাই এই সেক্টরের ভবিষ্যত খুবই উজ্জ্বল।  তরুণ যারা আছে তারা অনেকেই এর মাধ্যমে ঘরে বসে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করছে যা বাইরে করা খুবই কষ্ট সাধ্য।


২০৩১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়াতে ডিজিটাল মার্কেটিং এর বাজার বাড়তে ৪৩ শতাংশ বেশিরভাগ ই এখন এই পরামর্শ দিচ্ছে যে মেনুয়াল মার্কেটিং এ  ইনভেস্ট না করে ডিজিটাল মার্কেটিং এ ইনভেস্ট করতে। কারণ এতে খরচ ও কম পড়ছে আর বেশি গ্রাহকের নিকট ও পৌছানো সম্ভব হচ্ছে। 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url