বর্তমান এই ডিজিটাল যুগে অনলাইনে আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে এফিলিয়েট মার্কেটিং। অনলাইনে মার্কেটিং এর কয়েকটি বিভাগ এর মধ্যে এটি অন্যতম। বাংলাদেশেও দিন দিন এফিলিয়েট মার্কেটিং এর প্রচুর চাহিদা তৈরি হচ্ছে। তবে এফিলিয়েট মার্কেটিং এ লাভ যেমন বেশি তেমনি আপনার ইনভেস্ট, শ্রম, সময় দিয়ে কস্ট করেই কেবল আয় করতে হবে।
আপনি যদি এফিলিয়েট মার্কেটিং এ একদম নতুন হয়ে থাকেন তবে এখান থেকে আয় করাটা আপনার জন্য অনেক কঠিন হবে। কারণ, এফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য কয়েকটি ধাপে আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে। আপনি যদি আগ্রহী হয়ে থাকেন এফিলিয়েট মার্কেটিং করে অনলাইন থেকে টাকা আয় করবেন তাহলে আজকের আর্টিকেল টি আপনার জন্য যথেষ্ট হবে।
প্রিয় পাঠক, আমরা অনেকেই ইন্টারনেটের কল্যানে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর কথা শুনেছি। কিন্তু এ সম্পর্কে বিস্তারিত না জানার ফলে অনেকেই এফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে পারছেন না। এফিলিয়েট মার্কেটিং ( Affiliates Marketing) এর জন্য কি কি প্রয়োজন বা কিভাবে করতে হয় এ সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা প্রয়োজন।
এফিলিয়েট মার্কেটিং কি
এফিলিয়েট মার্কেটিং ( Affiliates Marketing) সম্পর্কে আলোচনা করতে হলে আগে বুঝতে হবে মূলত এফিলিয়েট বিষয় টা কি। মার্কেটিং বলতে বুঝায় "প্রচারণা" সেটা আমরা সকলেই জানি। এফিলিয়েট হচ্ছে কোনো কোম্পানির হয়ে আপনার পণ্য গুলো বিক্রি করে দিতে হবে। বিক্রির উপরে নির্ভর করে আপনাকে কিছু পরিমান কমিশন দেয়া হবে। এবং এটাই হচ্ছে আপনার ইনকাম।
এফিলিয়েট মার্কেটিং ( Affiliates Marketing) অনেক ভাবেই করা যায়। নিজে একটা ওয়েবসাইট তৈরি করে সেটাতে পণ্যের রিভিউ দিয়ে পণ্য বিক্রি করা, আবার কেউ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পণ্য প্রমোট এর মাধ্যমে বিক্রি করে কমিশন অর্জন করে। এটা কে কিভাবে করবে সেটা তার ব্যাক্তিগত ব্যাপার৷
তবে সাধারণত আপনি যদি, প্রফেশনাল ভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে চান তবে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে নিতে হবে। সেখানে মানসম্মত সঠিক কনটেন্ট দিতে হবে। এসএইও, প্রোডাক্ট ফানেল, পণ্য নির্বাচন ইত্যাদি বিষয় গুলোর উপরে মনোযোগ বেশি দিতে হবে।
এফিলিয়েট মার্কেটিং ( Affiliates Marketing) কিভাবে করবো
( Affiliates Marketing) এফিলিয়েট মার্কেটিং অনেক ভাবেই করা যায়। যদি আপনার ওয়েবসাইট থাকে তবে সেখানে ভালো ধরণের কনটেন্ট দিয়ে ভিজিটর এনে তাদের কে আপনার পণ্যের বিজ্ঞাপণ গুলোকে দেখাতে পারবেন অথবা আপনি সরাসরি পণ্যের রিভিউ দিতে পারবেন। এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে হলে নিচে প্রতিটি বিষয়ের উপরে আপনার অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
১- ইংরেজি জানতে হবে
এফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য আপনার ইংরেজি জানতেই হবে। যদি আপনি এমাজন সাইটের পণ্য গুলোকে বিক্রি করতে চান তবে সে আর্টিকেল বা পণ্যের রিভিউ গুলোকে আপনাকে ইংরেজি তে লিখতে হবে। যেহেতু বাংলাদেশে এমাজন বা বাহিরের কোনো অনলাইন মার্কেটপ্লেস ব্যবসা করেনা তাই আপনাকে বাহিরের দেশের কাস্টমার কে লক্ষ্য করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে আপনি যদি ইংরেজি না জানেন তবে কোনো ভাবেই এফিলিয়েট মার্কেটিং এ আপনি টিকতে পারবেন না। আন্তর্জাতিক ভাবে যে কোনো কাজ এই করতে যান না কেন ইংরেজি প্রয়োজন হবেই।
২- ডোমেইন ও হোস্টিং যোগ করা
আপনার ওয়েবসাইট এর নাম ডোমেইন নাম টি আপনার পণ্যের সাথে মিল রেখে করতে হবে। এতে বেশি পরিমান কাস্টমার আপনি সহজেই রিচ করতে পারবেন। পাশাপাশি ভালো মানের হোস্টিং আপনার ওয়েবসাইটের গতি অনেক গুন বাড়িয়ে দিবে। আপনার প্রথম কাজ এই হলো ডোমেইন ও হোস্টিং নিয়ে একটি এফিলিয়েট সাইট তৈরি করে নেয়া।
৩- এসএইও করা - Serch Engine Optmization
ওয়েবসাইটের জন্য এসএইও অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। সাধারণত একটি ওয়েবসাইট এসএইও করার মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিন গুলোতে ইনডেক্স করা হয়। আপনি যখন গুগলে কোনো কিছু খুজেন তখন আপনার খোজা বিষয়বস্তু গুলোই আপনার সামনে চলে আসে। মূলত এখানেই এসএইও এর কার্যক্রম শুরু হয়। এসএইও এর মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইট কে নির্ধারণ করা কাস্টমার পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। আপনি এসএইও তে যত বেশি ভালো করবেন তত বেশি কাস্টমার রিচ করতে পারবেন। এসইও এর মধ্যে মূল কয়েকটি বিষয় যা জানা প্রয়োজনঃ-
কীওয়ার্ড রিচার্সঃ আমরা যখন সার্চ ইঞ্জিন গুলোতে কোনো কিছু লিখে সার্চ করি তখন যে বিষয় গুলো লিখে সার্চ করি সেগুলো মূলত কী-ওয়ার্ড। আপনার ওয়েবসাইটে কোন ধরণের কনটেন্ট দিতে হবে, কোন ধরণের পণ্যের বিজ্ঞাপন দিবেন এ সব নির্ভর করে আপনার কী-ওয়ার্ড উপর।
অন পেজ এসএইওঃ যদি আপনি গুগলে সার্চ দেন "Top 5 Affiliates Site" তখন আপনাকে কয়েকটি সাইট গুগল প্রদর্শন করবে। মূলত, অন পেজ এসএইও এর মাধ্যমে একটি সাইটের কনটেন্ট ও ওয়েবসাইট কে টার্গেট করা কাস্টমার পর্যন্ত নিয়ে যায়। এর পাশাপাশি অফ পেজ এসএইও আপনাকে জানতে হবে।
৫- সঠিক পণ্য নির্বাচণ করা - Product Selection
এফিলিয়েট মার্কেটিং ( Affiliates Marketing) এর ক্ষেত্রে সঠিক ভাবে পণ্য নির্বাচন করা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যে সব পণ্যের প্রচারণা করবেন সেগুলোর লাভের পরিমান কেমন, ডিফিকাল্টি কেমন, সে পণ্য গুলো আপনার টার্গেট করা দেশ গুলোতে কেমন জনপ্রিয় ইত্যাদি বিষয় গুলোকে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে, এমাজন এফিলিয়েট এর পণ্য গুলোর প্রচারণা বাংলাদেশে করতে পারবেন না। আপনার ওয়েবসাইটের নিশ অনুযায়ী পণ্য নির্বাচন করলে আপনার কাস্টমার সংখ্যা এমনিতেই বৃদ্ধি পেতে শুরু করবে।
৫- প্রোডাক্ট ফানেল তৈরি করা
যে কোনো পন্য ক্রেতা ক্রয়ের পূর্বে নিশ্চয়ই সেটার ভালো দিক ও খারাপ দিক গুলো জেনে নেয়ার চেষ্টা করবে। সরাসরি আপনার পণ্যের এডস এর মাধ্যমে না নিয়ে আপনি আপনার বিজ্ঞাপন এর পণ্য গুলো সম্পর্কে আলাদা পেজে সঠিক বিবরণ লিখে দেয়ার চেষ্টা করুন। এর মাধ্যমে ক্রেতা একটা বিশ্বাসযোগ্য আস্থা পাবে। প্রোডাক্ট ফানেল এর মাধ্যমে যে কোনো পণ্যের বিক্রি অধিকাংশ পরিমানে বেড়ে যায়।
এফিলিয়েট মার্কেটিং ওয়েবসাইট
এফিলিয়েট মার্কেটিং ( Affiliates Marketing) এর জন্য প্রচুর পরিমানে ওয়েবসাইট রয়েছে। এসব ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে আপনি যে কোনো দেশ কে টার্গেট করে পণ্যের বিক্রির মাধ্যমে লাভ পাবেন। শুরুর দিকে শুধুমাত্র একটি ওয়েবসাইটে কাজ করার চেষ্টা করুন৷ অতিরিক্ত কাজ আপনাকে হতাশ করে দিতে পারে। নিচে কয়েকটি এফিলিয়েট সাইটের নাম দিয়ে দিলাম-
1- clickbank affiliates
2- Jvzoo affiliates
3- ClickBetter affiliates
4- PayDot affiliates
5- Amazon affiliates
এফিলিয়েট মার্কেটিং কেন করবেন
বর্তমান সময়টা তথ্য প্রযুক্তির। একটা সময় ছিল যখন মার্কেটিং এর মূল উপায় ছিল দোকানে দোকানে গিয়ে পণ্য বিক্রি করা। কিন্তু বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষ অনলাইনে সহজেই পণ্য ক্রয়ের জন্য বেশী আগ্রহী হয়ে থাকে। দিন দিন এটা অনেক বেশী বৃদ্ধি পাবে। আপনি যদি সঠিক ভাবে সব কিছু করতে পারেন তাহলে আগামী সময়ে আপনার ভালো একটা ক্যারিয়ার এখান থেকেই শুরু হতে পারে।
এফিলিয়েট এর সাইট গুলো আপনি ব্যবহার করার সময় না পেলে পরবর্তী সময়ে বিক্রি করে দিতে পারবেন। Flippa, Fi International এই সাইট গুলোতে একটু খেয়াল করলেই দেখবেন একটি এফিলিয়েট ওয়েবসাইটের মূল্য কত হতে পারে।
আমাদের শেষ কথা
এফিলিয়েট মার্কেটিং ( Affiliates Marketing) অনেক বিস্তৃত একটি বিষয়। সাধারণ একটা পোষ্টে এখানে সম্পুর্ণ বলাটা মুশকিল। তবে একটা বিষয় আপনার মাথায় রাখতে হবে। অনলাইনে আপনি যা কিছু করেন না কেন ধৈর্য ধরে কাজ না করতে পারলে কখনোই সফল হতে পারবেন না। আর এফিলিয়েট মার্কেটিং এর উপর নিজেকে যোগ্য না করে অনেক বেশী ইনভেস্ট কখনোই করবেন না। যেখানে লাভের পরিমান বেশী সেখানে যোগ্যতার পরিমান ও অনেক বেশী থাকতে হবে।