পাসপোর্ট করার নিয়ম - বাহিরের দেশে ভ্রমন কিংবা কোনো অফিসিয়াল কাজ যে কোনো ভাবেই প্রয়োজন হতে পারে পাসপোর্ট এর। অনেকেই রয়েছেন যারা ই-পাসপোর্ট সম্পর্কে এখনো সঠিক ভাবে অবগত নয়। দালাল ছাড়া পাসপোর্ট করার একমাত্র মাধ্যম হলো অনলাইনে ই-পাসপোর্ট এর আবেদন করা। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, পুলিশ ভেরিফেকশন, কত টাকা ফি, আবেদন কিভাবে করা যায় ইত্যাদি সব থাকছে পোষ্টের মূল বিষয়।
প্রিয় পাঠকগন, আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো অনলাইনের মাধ্যমে কিভাবে ইই-পাসপোর্ট করা যায়৷ আপনারা অনেকেই আছেন যাদের এই মুহুর্তে পাসপোর্ট করাটা অনেক বেশী প্রয়োজনীয়। কিন্তু পাসপোর্ট এর ব্যাপারে তেমন কোনো আইডিয়া না থাকায় দালাল ধরে অনেক সময় ফেক পাসপোর্ট নিয়ে পড়তে হয় নানান সমস্যায়। এ সমস্যা থেকে বাচতে আপনি নিজেই যথেষ্ট। কারণ আপনার পাসপোর্ট আপনি আবেদন সম্পন্ন করতে পারবেন।
পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
পাসপোর্ট এর আবেদন করার জন্য বেশ কিছু ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন পড়বে। যেগুলো হলোঃ-
- জাতীয় পরিচয় পত্র / জন্মনিবন্ধন কার্ড
- পূর্বের বিদ্যুৎ বিল এর কপি
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- ব্যাংক রশিদ
- পাসপোর্ট এর আবেদন ফর্ম
ই-পাসপোর্ট এর আবেদন প্রক্রিয়া E-Passport Application Process
ই-পাসপোর্ট এর আবেদন আপনাকে ৩ টি স্টেজে সম্পন্ন করতে হবে। প্রথমে পাসপোর্ট করার অফিসিয়াল সাইটের মাধ্যমে আবেদন করে প্রাথমিক ধাপ সম্পন্ন করতে হবে। এর পরে দ্বিতীয় ধাপে একটি ফর্ম ডাউনলোড করে সেটার দাথে ব্যাংকের টাকা জমাদানের রশিদ সহ পিন আপ করতে হবে। সব শেষে আপনাকে কয়েক কার্যদিবস এর মধ্যে MRP (আংগুলের ছাপ) সম্পন্ন করতে হবে। এটার জন্য নির্ধারিত শাখার এড্রেস আপনাকে বলে দেয়া হবে।
অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন যেভাবে করবেন
১- পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন করার জন্য প্রথমেই আপনাকে http://passport.gov.bd/ এই লিংকে যেতে হবে।
২- এর পরে একটু নিচের দিকে স্ক্রল করলে দেখবেন "continue to online enrolment " এখানে ক্লিক করতে হবে।
৩- এবারে একটি ফর্ম দেখতে পাবেন। এই ফর্মটি অনলাইনেই আপনাকে পূরণ করতে হবে।
৪- উল্লেখিত ফর্মটিতে পেমেন্ট তারিখ, পেমেন্ট কিভাবে দিবেন ইত্যাদি সকল তথ্য দিয়ে পূরণ করা হয়ে গেলে "save and next" ক্লিক করুন।
৫- এর পরে আপনার আবেদন এর সকল তথ্য দেখতে পাবেন। যদি কোনো তথ্য ভুল প্রদান করেন তাহলে "previous" অপশন থেকে সেটা ঠিক করে নিতে হবে। এর পরে "সাবমিট" বাটনে ক্লিক করলে আবেদন ফর্মটি পিডিএফ ফরম্যাটে ডাউনলোড হবে।
৬- এবারে আবেদন ফর্মের পিডিএফ টি কোনো দোকান এর মাধ্যমে প্রিন্ট (সাদা কালো প্রিন্ট করবেন না অবশ্যই রঙিন প্রিন্ট) করে নিবেন।
৭- প্রিন্ট কপিতে যেখানে যেখানে আবেদন কারীর ছবি, পিতা-মাতার ছবি দিতে বলা হবে সেসব স্থানে ছবি আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিতে হবে। নাম বাংলায় লিখে দিতে হবে ও প্রয়োজনীয় তথ্য গুলো টিক মার্ক দিতে হবে।
৮- এর পরে অনলাইনে আবেদন এর ফর্ম ও হাতে পূরণ করা ফর্ম ২ টি, সাথে বিদ্যুৎ বিলের কপি নিয়ে যে কোনো পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে। যাওয়ার পরে নির্ধারিত জিনিস গুলো অফিসে জমা দিতে হবে।
৯- এর পরে আপনার কাগজ পত্র যদি সঠিক ভাবে থাকে তাহলে তারা আপনাকে ফিংগ্রাপ্রিন্ট ও ছবি তোলার জন্য নির্দিষ্ট স্থান দেখিয়ে দেবে। সেখানে আপনার হাতের আংগুলের ছাপ প্রদান ও ছবি তুলতে হবে।
১০- বায়োমেট্রিক ভেরিফেকসন সম্পন্ন হয়ে গেলে ও আপনার দেয়া তথ্যে যদি কোনো ভুল না থাকে তাহলে আপনাকে একটি স্লিপ প্রদান করা হয়ে। যেটা আপনাকে পাসপোর্ট তোলার কাজে প্রয়োজন হবে। উক্ত স্লিপে লেখা থাকবে আপনি কবে পাসপোর্ট হাতে পাবেন।
আপাতত আপনার কাজ শেষ। এর পরে নির্দিষ্ট কয়েক সপ্তাহ গেলে আপনাকে দিয়ে দেয়া হবে। উল্লেখ্য যে, পাসপোর্ট এর জন্য পুলিশ ভ্যারিফেকসন ও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আপনি সঠিক তথ্য দিবেন প্রয়োজনে বার বার মিলিয়ে দেখবেন।
ই পাসপোর্টের টাকা জমা দেওয়ার নিয়ম
পাসপোর্টের আবেদন ফি আপনি নিচে দেয়া নির্ধারিত ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দিতে পারবেন -
- সোনালি ব্যাংক
- ওয়ান ব্যাংক
- ব্যাংক এশিয়া
- প্রিমিয়ার ব্যাংক
- ঢাকা ব্যাংক
পাসপোর্ট ফি কত ২০২২
পাসপোর্ট এর আবেদন এর সময় নির্ধারিত ফি জমার রশিদ ও দিতে হবে। তাই পাসপোর্টের ফি কত টাকা সেটা জানা গুরুত্বপূর্ণ । সরকারি চাকরিজীবিদের ক্ষেত্রে সাধারণ ফি এর মাধ্যমে জরুরি কাজ করিয়ে নিতে পারবেন। যদি পূর্বে কোনো সরকারী চাকরী করে থাকেন তাহলে অবসর হওয়ার সনদ টি দাখিল করতে হবে।
- জরুরি ফিস ৭ দিন উল্লেখিত ফি ৬০০০.০০ + ১৫% ভ্যাট = ৬৯০০.০০ টাকা
- সাধারণ ফিস ২১ দিন উল্লেখিত ফি ৩০০০.০০ + ১৫% ভ্যাট = ৩৪৫০.০০ টাকা
- অনাপত্তি সনদ (NOC) এর ভিত্তিতে জরুরি সুবিধাসহ উল্লেখিত ফি ৩০০০.০০ + ১৫% ভ্যাট = ৩৪৫০.০০ টাকা
- সরকারি আদেশ (GO) এর ভিত্তিতে চিকিৎসা, হজ্জ্ব পালন, ভ্রমন এর ক্ষেত্রে উল্লেখিত ফি ৩০০০.০০ + ১৫% ভ্যাট = ৩৪৫০.০০ টাকা
সরকারি কাজের ক্ষেত্রে কোনো নির্ধারিত ফি নেই (বিনামূল্যে)
ই পাসপোর্ট কত দিনে পাওয়া যায় ২০২২
পাসপোর্ট সাধারণত ১৫ দিনের মধ্যেই হাতে পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে যদি উল্লেখিত সময়ে কোনো প্রকার সমস্যা না হয়ে থাকে।
আমাদের শেষ কথা
পাসপোর্ট করার নিয়ম আর্টিকেলে আমরা কিভাবে দালাল ছাড়া পাসপোর্ট নিজেই করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে দিলাম। এর পরেও যদি কোনো অংশে আপনাদের বুঝতে অসুবিধা হয়ে থাকে তাহলে আমাদের মন্তব্য এর মাধ্যমে জানাতে পারেন। আশা করি পাসপোর্ট সংক্রান্ত সকল সাহায্য পাবেন। এতক্ষন ধরে আর্টিকেল টি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
- ই পাসপোর্ট এর আবেদন প্রক্রিয়া E-Passport Application Process
- ই পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম
- এনআইডি: জাতীয় পরিচয়পত্রে তথ্য ভুল হলে যেভাবে সংশোধন করবেন
- জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার নিয়ম